নওগাঁর বড়গাছা গ্রামে তিন দিনব্যাপী রাস উৎসব
প্রকাশিত : ১৭:৩৩, ২০ নভেম্বর ২০২১
নওগাঁর বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতি এলাকায় ব্যাপক উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে রাস পূজা। কোথাও কোথাও বসেছে মেলা। জেলার প্রায় ২'শ বছরের প্রাচীন রানীনগর উপজেলার বড়গাছা গ্রামে বড়গাছা রাস মন্দিরে সবচেয়ে বড় পরিসরে তিন দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে এই রাস পূজার।
এই মন্দিরে ৩৯টি প্রতিমা স্থাপন করে চলছে পূজা-অর্চনা। রাস পূর্ণিমার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার থেকে তৃতীয় দিন শনিবার পর্যন্ত এই রাস পূজা চলে। এসময় হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে পূজা অর্চনায় ব্যস্ত সময় পার করেন।
আয়োজকরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মহামারী করোনা থেকে মুক্তি লাভ ও জগতের শান্তি লাভের আশায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এই রাস পূজা।
এদিকে এই রাস পূজাকে ঘিরে সেখানে বসেছে রাস মেলা। মন্দিরের আশেপাশে মাছের বাজার, হরেক-রকমের মিষ্টির দোকান, চুরি ফিতা, কুঠির শিল্প ও মৃত শিল্পের নানা পণ্যের সমাহার। আবার এই মেলাকে ঘিরে বড়গাছা গ্রামসহ আশেপাশের অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে আগমন ঘটে আত্মীয়দের সমাগম। চারদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে কয়েকদিন যাবত।
রাসপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবলু সাহা জানান প্রায় দু’শ বছর ধরে শ্রী কৃষ্ণের রাস লীলাকে ধারন করে এই রাস মেলা বা রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তিন দিনের এ উৎসবে মুখরিত হয় জন-মানুষের মিলন মেলায়। শুধু পুণ্যার্থীরাই নয়, নানা ধর্ম-বর্নের মানুষ মিলিত হয় রাস লীলা ও পূজায়।
মহামারী অবস্থার মধ্যে এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে,“পাপ মোচন ও পুণ্য লাভের আশায় উৎসবের প্রথম দিন থেকেই পূন্যার্তীদের ঢল নামে। পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে করোনা থেকে মুক্তি পেতে সকলেই প্রার্থনা করেছেন। অনেকে আবার ভিন্ন ভিন্ন মানত করে পূজা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা শহরে হতে ওই মেলায় আসা জীতেন্দ্র নাথ,রবীন্দ্রনাথ সরকার,শুভ্রজিত কুমার মন্ডল ও অনিতা রানী পালসহ অনেকেই বলেন আমার একটি মানত ছিল। সেই মানত পূর্ণ করার জন্যই এখানে এসেছি। এছাড়াও বিশ্বের সকল জীবের মঙ্গল কামনায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনে প্রার্থনা করেছি।”
সেখানে আসা মুসলিম ধর্মের লোকজনের মধ্যে লোকমান শেখ, আরমান হোসেনসহ এমন অনেকেই বলেন মানণীয় প্রধানমন্ত্রীতো বলেছেন“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই উৎসবের আনন্দটুকু নিতে এখানে আসা। তারা বলেন এখানে আগে কখনও আসিনি। শুধু লোকমুখে শুনেছি তাই আজকে এসে দেখলাম রাস মন্দিরে পূজা। খুব ভালো লেগেছে। খুবই সুন্দর পরিবেশে। বেশ উপভোগ করলাম।”
বড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্বদেশ সরকার বলেন, অত্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে এই রাসপূজা। তবে এবার কোন সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়নি। তবে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী রাস মন্দিরটি এখনোও অনেক অবহেলিত। তাই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি আরো আধুনিকায়ন করা সম্ভব হতো।
জানা গেছে, জেলার অন্যন্যা উপজেলার পাশাপশি রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, জলকৈ, পারইল-বিষা, কালিগ্রামের হরিপুর, ভুতনা, সদর ইউনিয়নের ঋষিপাড়া, আতাইকুলার পালপাড়া ও হরিষপুর গ্রামে একইভাবে রাস পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এব্যাপারে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন আকন্দ বলেন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বড়গাছার রাস মন্দির রাস পূজার আয়োজন ছিল। এ কারণে ওই রাস মন্দিরে পূজার শুরু থেকেই আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে সুদৃষ্টি রাখা হয়েছিলো। শান্তিপূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পূজার কাজ শেষ করেছে।
কেআই//
আরও পড়ুন